Monday, 11 January 2016

বিনিয়োগ বাজী ধরা কিনা

বিনিয়োগ বলতে বোঝায়, কিছু অর্থ এমন এক জায়গায় রাখা যেখান থেকে কিছু আয় বা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে । বিকল্প উপায়ে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়, সে বিষয়ে ভাবা ।  আমরা সাধারণত ভাবি, যে কোন এক বা একাধিক কাজে যোগদান করে এবং কাজ করেই আয় উপার্জন হতে পারে্ এবং আমরা বেশিভাগই মনে করি, বেশি উপার্জন হয় বেশি বেশি কাজ করে এবং সেই কাজে বেশি সময় নিয়োজিত থেকে । কিন্তু বাস্তব ঘটনা হল, আমরা এক নাগাড়ে সীমাহীন সময়ের জন্য এক ভাবে কাজ করতে পারি না । মজার ব্যাপার হল, অর্থ যদি ভোগ নাই করতে পারি, যদি সে আয় কারো কাজে নাই লাগে, তবে সে উপার্জনের কোন মানে নেই ।

বিনিয়োগের দুটি দিক আছে - ঝুঁকি যুক্ত বিনিয়োগ, ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ ।
ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ হল  কষ্টার্জিত অর্থ ব্যাংকে বা পোস্ট-অফিসে ফিক্সড ডিপোজিট, রেকারিং ডিপোজিট, মাসিক আয় প্রকল্প ইত্যাদিতে রাখা -- যা নির্দিষ্ট সময় অন্তে পূর্বনির্ধারিত হারে আপনার আসলের সাথে ফেরত পাওয়া যায় । আর
ঝুঁকিযুক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফেরতের নির্দিষ্ট কোন হার নেই । নির্দিষ্ট সময় অন্তে কখনও কখনও আপনার আসলের অনেকগুন বেশি ফেরত পেতে পারেন , বা আপনার আসলের অনেকটা নাও পেতে পারেন । যেমন- শেয়ারে  বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ । এখানে ঝুঁকি একটু বেশি, তাই কপাল মন্দ না হলে, ফেরত লাভও অনেক বেশি ।

বিনিয়োগ বিভিন্ন ভাবে করা যেতে পারে- ব্যাংকে নানা প্রকল্পে জমা রেখে, শেয়ার, বন্ড বা মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনে রেখে, জমি-বাড়ি কিনে, সরাসরি কাউকে ধার দিয়ে ইত্যাদি ভাবে বিনিয়োগ হতে পারে ।

আর লটারির টিকিট কেনা, বাজী ধরা ঝুঁকিপূর্ণ খেলা । এখানে টাকা রাখা হয় একটি অনিশ্চিত ধারণায় যে আপনি ঠিক হবেন । যদি ঠিক হন, তাহলে সব কিছু আপনার, আর ভুল হলে আপনার সব কিছু গেল ।

বিনিয়োগ ও বাজী ধরার মধ্যে মূল পার্থক্য হল, বিনিয়োগকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন,  প্রয়োজনে খানিকটা হ্রাস বৃদ্ধি করতেও পারেন, কিন্তু বাজী ধরাকে আপনি কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না । বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত আপনার ভুল হলে, আপনি অল্প সময়ের মধ্যে অল্প ক্ষতির বিনিময়ে সেটা তুলে নিতে পারেন, কিন্তু বাজী ধরা বা লটারির ক্ষেত্রে তেমন কোন সুবিধা নেই । এলোপাথাড়ি ভাবে বাজী ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু বিনিয়োগের আগে অনেক হিসাব-নিকাশ করে তার পর তার মা্রিমা, পরিমাণ ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয় । বাজী ধরা বা লটারির টিকিট কাটা এক ধরণের খামখেয়ালিপনা, কিন্তু একজন প্রকৃত বিনিয়োগকারী কোন প্রকার খা্নখেয়ালিপনায় ভর করে বিনিয়োগ করেন না । সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, বিনিয়োগ হয়ে গেলেও নানা প্রকার গাণিতিক, সংখ্যাগত বা অন্য কোন উপায়ে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে  তার ভুল গতিপ্রকৃতি সংশোধন করা যায়, কিন্তু বাজী ধরার পর তার গতিপ্রকৃতি চালচলনে আপনার হস্তক্ষেপের কোন অবকাশ নেই । প্রকৃত বিনিয়োগের ফলে সবাই উপকৃত হয়, বাজী ধরার ফলে  কেবলমাত্র এক পক্ষ উপকৃত হয়।

তাহলে প্রশ্ন অনিবার্য ভাবে আসে, বিনিয়োগেও ঝুঁকি থাকে, তাহলে বিনিয়োগ করব কেন ? ঝুঁকিহীন  বিনিয়োগও আছে, সেখানে রিটার্ন কম; রিটার্ন বেশি যেখানে, সেখানে ঝুঁকি একটু বেশি । স্রোতে সাঁতার কাটা অনেক সহজ, যারা সাঁতার জানেন, তাদের ডুবে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, আগে থেকে শিখে রাখা সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটা একটা দারুণ কাজ, একটা আর্ট ।



No comments:

Post a Comment