Friday, 8 January 2016

ভূমিকা






ছোটবেলা থেকে একটা কথা শুনে আসছি - হাওয়ায়  টাকা উড়ে বেড়ায়, হাত বাড়িয়ে শুধু ধরতে জানলেই টাকা হাতের মুঠোয় ! প্রথম প্রথম যখন কথাটা শুনতাম  তখন কথাটা বিশ্বাস না করলেও একেবারে অবিশ্বাস করতাম না । মনে মনে ভাবতাম, একবার সেই হাওয়াটা আমার সামনে এলে হয়, কিছু টাকা ধরে নেওয়া যাবে ।
স্কুল পার করে কলেজে যখন ভর্তি হলাম, পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য দু-একটা ছাত্র পড়াতাম । যা পেতাম, ইচ্ছে মত খরচ করতে না পারলেও কলেজের পড়াশুনা ঠিক চলে যেত । আমার স্কুলের এক বন্ধু গোপাল, সে ক্লাস টুয়েলভ পাশ করেই প্রাইভেট টিউশন শুরু করল, অনেক ছাত্র পড়াতো । আমার যেখানে সর্ব-সাকুল্যে ছয় কি সাতটা ছাত্র ছিল, তখন ওর ছিল প্রায় ২০-২৫টা । আমার বাবা ওকে দেখিয়ে বলতেন, “ কি করিস বলত? টাকা হাওয়ায় ওড়ে, তুই ধরতে পারলি না, গোপাল ঠিক ধরে নিল” । তখন বুঝেছিলাম হাওয়ায় টাকা ওড়ার আসল ব্যাপারখানা । অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা রোজগার করার ক্ষেত্রেই এই ধরণের কথা ব্যবহার করা হয় । এর পর কাজের বাজারে এসে দেখলাম, এতদিন ধরে স্কুল-কলেজে যে শিক্ষা অর্জন করলাম, সেই শিক্ষা নিয়ে কোন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না । যারা কাজ দেবেন, তারা স্কুলপাশের সার্টিফিকেট দেখতে চাইলেও আসলে আলাদা রকমের দক্ষতার খোঁজ করছেন । সেই আলাদা দক্ষতা অর্জন করতে গিয়ে সেই পুরানো কথাটা আবার মনে এল ।
মনে পড়ে, একবার আমাদের পাড়ার বেশিরভাগ যুবক ছেলেরা কোট-প্যান্ট পরে গলায় টাই ঝুলিয়ে মাঞ্জা দিয়ে খুব মিটিং-মিছিল করছে । আমার থেকে যারা বয়সে বড়, তারা তো ঘুরছে, তাদের পরিবারের ছোটরাও ফুলবাবু হয়ে ঘুরছে । সবাই কি একটা নেটওয়ার্কিং বিজনেসে নেমেছে, অল্প ক’দিন পরে সবাই চারচাকার গাড়ির মালিক হবে । আমি কলেজে পড়ি । সকালবেলা দুটো ভাত নাকে-মুখে গুঁজে বই-খাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি, কারো বাড়িতে দু’চারজন ছাত্র পড়িয়ে সোজা কলেজে, কলেজ থেকে ফিরে আবার কোথাও ছাত্র পড়িয়ে বেশ রাতে বাড়ি ফেরা —এই ছিল আমার রোজকার ডিউটি । পাড়ার কোথায় কি হচ্ছে, তা জানার সময় ছিল না । এদিকে আমার বাবা কোথা থেকে খোঁজ নিয়ে এসে দিনরাত মায়ের সাথে ঝগড়া বাঁধাতেন, কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলাম আমি । পাড়ার সবাই খুব তাড়াতাড়ি বড়লোক হয়ে যাচ্ছে, আমি কেবল বাদ । তারপর যা হবার হল, কেউ বড়লোক হতে পারল না, আমি একটা সরকারি চাকরি পেয়ে গেলাম ।

আজকাল একটা ব্যাপার দেখে বেশ মজা লাগে, ছেলে-মেয়ে বুড়ো-বুড়ি সব কেমন একটা নেশায় মেতে উঠেছে । ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ নিয়ে সবাই ব্যস্ত ।  বেশিরভাগ লোকের কানে হেডফোন গোঁজা ।  সবার হাতে স্মার্ট ফোন, সাথে ইন্টারনেট কানেকশন । সবাই ডিজিট্যাল হয়ে উঠেছে । এই মজা নেওয়ার সাথে সাথে যদি কিছু রোজগার করা যায়, তাহলে মন্দ কি ! ভারত এক উন্নয়নশীল দেশ, উন্নতির হাওয়া বইছে সব দিকে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হাঁক-ডাক বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের সংখ্যাও । বিশ্ব বাজারে ক্রুডঅয়েলের দাম কমেছে, ব্যাংকে সুদের হার কমছে, দ্রব্য-সামগ্রীর উপর সেস বাড়ছে-কমছে । যারা চাকুরী-ব্যবসা থেকে অবসর নিয়ে সারা জীবনের ধন ব্যাঙ্কে জমিয়ে সুদ পাবার আশায় দিন কাটাচ্ছিলেন, তাদের কপালের ভাঁজ বাড়ছে, ভাবছেন বিকল্প আয় কিভাবে করা যায় ? সরকার তাদের জন্য লগ্নিরবাজারের দরজা আরও একটু খুলে দিয়েছেন । কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার একটা বড় অংশ সরকার লগ্নি করছেন এই বাজারে । আশা অনেক টাকা প্রফিট হবে এখানে । অবসর নেওয়া মানুষগুলো বেশি করে পেনশন ইত্যাদি পাবেন । যদি ইচ্ছা পূরণ হয়, সেই দিক থেকে ভাবলে এটা একটা বিকল্প আয়ের জায়গা হতে পারে । যত দিন যাবে, এই জায়গাটা আরও মজবুত হবে । জনসংখ্যা বাড়লে, চাহিদা বাড়বে । দেশে-বিদেশে শিল্পপণ্যের যোগান বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে উৎপাদন । ফলে শিল্পের ব্যবসা অবশ্যই বাড়বে । আর এই বাজারে যারা লগ্নি করবেন, তারা অবশ্যই লাভবান হবেন – একথা নিশ্চিত ভাবে বলাই যায় । আপনার সঞ্চয়ের কিছুটা অংশ বাজারে লগ্নি করলে, সেটা হবে বিনিয়োগ, আর বিনিয়োগ থেকে অতিরিক্ত যা পাবেন, সেটা হবে আপনার আয় । এই আয়, সঞ্চয় আর বিনিয়োগই আমার আলোচনার বিষয়বস্তু । টাকা-পয়সা রোজগার করা খুব সহজ বিষয় নয়, যদি সহজ হত, তাহলে সারা পৃথিবীতে সহজেই সবাই বড়লোক হয়ে যেত । সফল মানুষেরা বলেন, প্রচেস্টা থাকলে আয়-উপার্জন করা আবার খুব কঠিন নয় । বিরাট বড়লোক হওয়ার কথা বলছি না, অন্তত বেঁচে থাকার মত কিছু রোজগার করা যাবে এমন কিছু পথ-নির্দেশ সকলে মিলে একবার খুঁজে দেখলে হয় না ?
 এই ব্লগে টাকা-পয়সার আলোচনা ছাড়াও সাহিত্য-চর্চা, সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের অভিমত, সমর্থন বা প্রতিবাদ, বা আরও কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা যাবে ।



1 comment: